ও মা, কি হবে? এত বড় ফোঁড়া কি করে সারবে?
টুনটুনি একে জিগগেস করে, তাকে জিগগেস করে। সবাই বলরে, ‘ওটা নাপিত দিয়ে কাটিয়ে ফেল।’
তাই টুনটুনি নাপিতের কাছে গিয়ে বললে, নাপিতদাদা, নাপিতদাদা, আমার ফোঁড়াটা কেটে দাও না!’
নাপিত তার কথা শুনে ঘাড় বেঁকিয়ে নাক সিটকিয়ে বললে, “ঈস্! আমি রাজাকে কামাই, দেখি তোর ফোঁড়া কাটতে গেলুম আর কি!’
টুনটুনি বললে, ‘আচ্ছা দেখতে পাবে এখন, ফোঁড়া কাটতে যাও কি না।’
বলে সে রাজার কাছে নালিশ করলে, ‘রাজামশাই, আপনার নাপিত কেন আমার ফোঁড়া কেটে দিচ্ছে না? ওকে সাজা দিতে হবে!’
শুনে রাজামশাই হো হো করে হাসলেন, বিছানায় গড়াগড়ি দিলেন, নাপিতকে কিছু বললেন না। তাতে টুনটুনির ভারি রাগ হল। ইঁদুরের কাছে গিয়ে বললে, ‘ইঁদুরভাই, ইঁদুরভাই, বাড়ি আছ?’
ইঁদুর বললে, ‘কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?’
টুনটুনি বললে, ‘তবে ভাত খাই, যদি এক কাজ করে।’ ইঁদুর বললে, ‘কি কাজ?’
টুনটুনি বললে, ‘রাজামশাই যখন ঘুমিয়ে থাকবেন, তখন গিয়ে তাঁর ভুঁড়িটা কেটে ফুটো করে দিতে হবে।’
তা শুনে ইঁদুর জিভ কেটে কানে হাত দিয়ে বললে, ‘ওরে বাপরে! আমি তা পারব না।’ তাতে টুনটুনি রাগ করে বিড়ালের কাছে গিয়ে বললে, ‘বিড়ালভাই, বাড়ি আছ?’
বিড়াল বললে, ‘কে ভাই? টুনি ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?’
টুনটুনি বললে, ‘তবে ভাত খাই, যদি ইুঁদর মার।’
বিড়াল বললে, ‘এখন আমি ইঁদুর-টিদুর মারতে যেতে পারব না, আমার বড্ড ঘুম পেয়েছে।’ শুনে টুনটুনি রাগের ভরে লাঠির কাছে গিয়ে বললে, ‘লাঠি ভাই, লাঠি ভাই, বাড়ি আছ?’
লাঠি বললে, ‘কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বসস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?’ টুনটুনি বললে, ‘তবে ভাত খাই, যদি বিড়ালকে ঠেঙাও।’
লাঠি বললে, ‘বিড়াল আমার কি করেছে যে আমি তাকে ঠেঙাতে যাব? আমি তা পারব না।’ তখন টুনটুনি আগনের কাছে গিয়ে বললে, ‘আগুনভাই, আগুনভাই, বাড়ি আছ?’
আগুন বললে, ‘কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?’
টুনটুনি বললে, ‘তবে ভাই খাই, যদি তুমি লাঠি পোড়াও।’
আগুন বললে, ‘আজ ঢের জিনিস পুড়িয়েছি, আজ আর কিছু পোড়াতে পারব না।’ তাতে টুনটুনি তাকে খুব করে বকে, সাগরের কাছে গিয়ে বললে, ‘সাগরভাই, সাগরভাই, বাড়ি আছ?’
সাগর বললে, ‘কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?’
টুনটুনি বললে, ‘তবে ভাই খাই, যদি তুমি আগুন নিবাও।’
সাগর বললে, ‘আমি তা পারব না।’ তখন টুনটুনি হাতির কাছে গিয়ে বললে, ‘হাতিভাই, হাতিভাই, বাড়ি আছ?
হাতি বললে, ‘কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?’
টুনটুনি বললে, ‘তবে ভাত খাই, যদি সাগরের জল সব খেয়ে ফেল।’
হাতি বললে, ‘অত জল খেতে পারব না, আমার পেট ফেটে যাবে।’
কেউ তার কথা শুনল না দেখে টুনটুনি শেষে মশার কাছে গেল। মশা দূর থেকে তাকে দেখেই বললে, ‘কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?’
টুনটুনি বললে, ‘তবে ভাত খাই, যদি হাতিকে কামড়াও।’
মশা বললে, ‘সে আবার একটা কথা! এখুনি যাচ্ছি! দেখব হাতি বেটার কত শক্ত চামড়া!’ বলে, সে সকল দেশের সকল মশাকে ডেকে বললে, ‘তোরা আয় তো রে ভাই, দেখি হাতি বেটার কত শক্ত চামড়া! অমনি পীন্-পীন্-পীন্-পীন্ করে যত রাজ্যের মশা, বাপ বেটা ভাই বন্ধু মিলে হাতিকে কামড়াতে চলল। মশায় আকাশ ছেয়ে গেল, সূর্য ঢেকে গেল। তাদের পাখার হাওয়ায় ঝড় বইতে লাগল। পীন্-পীন্-পীন্-পীন্ ভয়ানক শব্দ শুনে সকলের প্রাণ কেঁপে উঠল। তখন-
হাতি বলে, আগুন শুষি।
সাগর বলে, আগুন নেবাই!
আগুন বলে, লাঠি পোড়াই!
লাঠি বলে, বিড়াল ঠেঙাই!
বিড়াল বলে, ইঁদুর মারি।
ইঁদুর বলে, রাজার ভুঁড়ি কাটি!
রাজা বলে, নাপতে বেটার মাথা কাটি!
নাপিত হাত জোড় করে কাঁপতে কাঁপতে বললে, ‘রক্ষে কর, টুনিদাদা! এস তোমার ফোঁড়া কাটি।
তারপর টুনটুনির ফোঁড়া সেরে গেল, আর সে ভারি খুশি হয়ে আবার গিয়ে নাচতে আর গাইতে লাগল-টুনটুনা টুন্ টুন্ টুন্! ধেই ধেই!